সময়কাল ডেস্ক :কত প্রশ্ন, কত আলোচনা। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গোল করবেন কে? অতীতের মতো আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও গোল করতে ব্যর্থ ফরোয়ার্ডরা। দোহায় বৃহস্পতিবার যখন আফগানের কাছে চোখ রাঙানি দিচ্ছিল আরেকটি হারের, তখনই পাদপ্রদীপের আলোয় তপু বর্মণ।
যার কাজটা রক্ষণ সামলানো, যেটা দারুণভাবে সামলে ছিলেন। কিন্তু শুধু রক্ষণ নয়, নারায়ণগঞ্জ থেকে উঠে আসা বসুন্ধরা কিংসের এ তারকা দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হয়ে যান পুরোদস্তুর ফরোয়ার্ড! স্কোরিংয়ের সমস্যাটা দূর করতে নিচ থেকে উঠে এসে কখনও হেডে কিংবা কখনও পা দিয়ে দলকে গোলের উল্লাসে মাতাতে বেশ পারঙ্গম তিনি। ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও সে কাজটি করেছেন ‘ক্রাইসিসম্যান’ তপু বর্মণ। ৮৪ মিনিটে রিয়াদুল রাফির হেড থেকে পাওয়া বলটা বুক দিয়ে নামিয়ে শরীরকে দ্রুত ঘুরিয়ে ডান পায়ে করা তপুর গোলটি দেখে অনেকেরই মনে হয়েছে, যেন ইউরোপিয়ান কোনো বড় প্রতিযোগিতার গোল। এ ডিফেন্ডারের গোলেই মুখ বন্ধ হওয়া সমালোচকরা এখন জাতীয় দলের বন্দনায়। আফগানদের সঙ্গে ১-১ গোলের ড্রয়ের নায়ক তপুকে ঘিরেই এখন যত আলোচনা।
২০১৩ সালে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হয় তপু বর্মণের। নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল হাজীরবাগে বেড়ে ওঠা তপুর ফুটবলের হাতেখড়ি বড় ভাই দিপু বর্মণের হাত ধরে। বাবা দয়াল বর্মণ এবং মা ঠাকুর দাসী বর্মণের ঘরে জন্ম নেওয়া ছোট ছেলেটি ছাপিয়ে গেছেন বড় ভাই দিপুকে। ফুটবল খেললেও তপুর মতো বড় মঞ্চে কখনোই দেখা যায়নি বড় ভাই দিপুকে। নারায়ণগঞ্জের লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলের মাঠে একসময় ফুটবল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো সে ছেলেটিই কিনা এখন বাংলাদেশের ফুটবলের বড় তারকা। আট বছর আগে জাতীয় দলে নাম লেখানো তপুই এখন ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতা ঢাকছেন! গত ছয় বছরে জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
২০১৫ সালে কেরালা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৩-০ গোলের জয়ের প্রথম গোলটি ছিল তপুর। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২০১৮ সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের জয়ের গল্পগুলোর মূলেই ছিলেন বসুন্ধরা কিংসের এ ডিফেন্ডার। ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বরে নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় গোলটি ভুটানের সঙ্গে করেছিলেন তিনি।
তবে তপুকে সবাই মনে রাখবে ৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ১-০ গোলের সেই জয়ের ম্যাচটিতে। পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের রক্ষণের দেয়াল ভাঙতে পারছিলেন না বাংলাদেশের কোনো ফরোয়ার্ড। খেলা শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে ক্রাইসিসম্যানের ভূমিকায় তপু বর্মণ। তার গোলেই পাকিস্তানকে হারিয়ে মূল্যবান তিন পয়েন্ট পেয়েছিল লাল-সবুজের দলটি। বারবার দলের প্রয়োজনে ত্রাতা হয়ে ওঠা তপু এবার অতীতের সব সাফল্যকে ছাপিয়ে গেছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে গোল করে। কারণ বাছাইয়ের শেষ তিন ম্যাচে বাংলাদেশ যে পয়েন্টের আশা করেছিল, তার একটি হলো আফগানিস্তান।
জাতীয় দলের জার্সিতে চার গোল করা তপুর কাছে সবচেয়ে দামি গোলটি এখন আফগানদের বিপক্ষে করা গোলটি, ‘সাফে পাকিস্তানের বিপক্ষে গোলটি খুব প্রয়োজন ছিল। আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে তো সেটা আরও বেশি। কারণ এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ড খেলতে হলে পয়েন্টের বিকল্প ছিল না। ভিন্ন ভিন্ন হিসেবে দুটি গোলই দামি। তবে এ মুহূর্তে আমার কাছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে করা গোলটিই মনে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি দামি।’
Copyright © 2023 সময়কাল নিউজ | Design & Developed By: ZamZam Graphics