সময়কাল ডেস্ক:
সনাতন ধর্মালম্বিদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটছে এ উৎসবের। পাঁচ দিনের এ উৎসব শেষ হবে আগামি ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে সারাদেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। দুর্গাপূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে শেষ হয়েছে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতিও।
এর আগে বৃহস্পতিবার সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোতে দুর্গা দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা পূজা করা হয়। মণ্ডপে-মন্দিরে পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এই বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লংকা যাত্রার আগে শ্রী রামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে, যা শারদীয় দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। দেবীর শরৎকালের পূজাকে এ জন্যই হিন্দুমতে অকাল বোধনও বলা হয়।
সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন (আগমন)। দেবী স্বর্গলোকে বিদায়ও (গমন) নেবেন ঘোটকে চড়ে, যার ফল হলো ফসল ও শস্যহানি। অর্থাৎ এবার দুর্গা দেবীর আগমনে পৃথিবী থেকে শস্য ও ফসলের বিনাশ হবে।
এবছর সারাদেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, যা গতবারের তুলনায় ৪৮৩টি বেশি। আর ঢাকা মহানগরীর এবারের পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৩৭টি, যা গত বছরের তুলনায় তিনটি বেশি।
শারদীয় দুর্গাপূজার প্রথম দিন আজ ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ষষ্ঠী তিথিতে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল দুর্গোৎসব। শনিবার মহাসপ্তমী, রোববার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা, সোমবার মহানবমী এবং মঙ্গলবার বিজয়া দশমী। শেষ দিনে প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়ার শোভাযাত্রা।
দুর্গোৎসব চলাকালে পূজার প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগআরতির আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া দেশজুড়ে দুর্গোৎসব চলাকালে মণ্ডপে মণ্ডপে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, নাটক, নৃত্যনাট্যসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হবে।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
পৃথক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিত্রয় মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত বীরউত্তম, ঊষাতন তালুকদার ও হিউবার্ট গোমেজ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মণ্ডল, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতিত্রয় পংকজ সাহা, রাহুল বড়ূয়া ও রবার্ট নিক্সন ঘোষ এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাপস বল জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এরই পাশাপাশি প্রতিটি পূজামণ্ডপ গুলোতে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীও দায়িত্ব পালন করবেন।
Copyright © 2023 সময়কাল নিউজ | Design & Developed By: ZamZam Graphics