সময়কাল ডেস্ক :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস পূর্বাঞ্চালের ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে বিজয়নগর উপজেলা গঠন করা হয় ২০১০ সালে। আর এ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয় ৩রা আগষ্ট ২০১০ইং সালে। উপজেলা গঠনের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্মিত হচ্ছে সকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অফিস ও দপ্তর সমূহ। এরই মধ্যে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ হলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ইতিমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যাবতীয় অবকাঠামো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গত ১ নভেম্বর ২০১৮ ইং সালে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফান্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের ১ বছর পার হলেও আদৌ পযর্ন্ত এ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়নি এখনো । তবে জনবলের অভাবে এ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি বলে জানা গেছে। এতে করে এ উপজেলার সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। এখনো এই অঞ্চলের লোকজন স্বাস্থ্যসেবা নিতে দৌড়ঝাপ করতে হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল ও প¦ার্শ্ববর্তী আখাউড়া ও হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে হয় তাদের। এতে করে বিজয়নগর উপজেলার সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ এখনো কাটেনি। কবে নাগাদ শেষ হবে দূর্ভোগ আর শুরু হবে এ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম এমনটাই এখন ভাবার বিষয় ।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের অবকাঠামো কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু সরঞ্জামও আনা হয়েছে। তবে জরুরী সেবা ও বর্হির বিভাগের কোন যন্ত্রপাতি এখনো আসেনি এ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে। তবে ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শুধুর মাত্র আউট ডোর সেবা চলমান রয়েছে। এতে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত ডাক্তার গণের মধ্যে ৩ জন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসাগণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আউটডোর সেবাটি পরিচালনা করে আসছেন। আর আউট ডোরের সেবা নিতে প্রতিদিনিই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সী রোগী আসতে দেখা যায়। স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা বিলকিস বেগম জানান, এখনো হাসপাতাল ভালভাবে চালু হয়নি। আসলে একজন ডাক্তার দেখে কিছু লেখে দেই ঔষধ আর কোন পরিক্ষা দিলে আবার দৌড়াইতে হয় শহরে বা আখাউড়ায়। এতে করে আমাদের আরো হয়রানি বাড়ছে। মেরাসানী এলাকার মো. বাবুল মিয়া বলেন, এলাকাবাসির প্রচেষ্টায় আউট ডোর চালু রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যসেবা যেন দ্রুত পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু করা হয় সে দিকে উধ্বতর্ন কর্তৃপক্ষে সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। স্বাস্থ্যসেবা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হওয়ায় ইমার্জেন্সি রোগিরা অনেক বিপাকে পড়তে হয়। তাই আমরা রোগিদেরকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী আখাউড়া, মাধবপুর এবং জেলা সদরে যেতে হয় এমন আক্ষেপ জানান চম্পকনগর এলাকা থেকে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা আনোয়ার হোসেন। বুধন্তী গ্রাম থেকে আসা জাহানারা বেগম বলেন, আমি আমার ৪ মাসের শিশু বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি, তবে এখানে কোন পরিক্ষা নিরিক্ষা না থাকায় জেলা সদরে নিয়ে যেতে বলেছেন। তাই চলে যাচ্ছি। এখানে তেমন কোন পরীক্ষা নিরিক্ষা বা কাঙ্খিত সেবা মিলছে না। সর্বোপরি উপজেলাবাসির একই দাবি, উপজেলাবাসি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেত শীঘ্রই যেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পরিবার পরিকল্পনা অফিসারদের মধ্যে ৩ জন ডাক্তার পালাক্রমে এখানে চিকিৎসা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। তাদের মধ্যে কথা হয় ডাঃ আশরাফুল আলমের সাথে , তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এখানে নেই কোন জনবল। তাই আমরা তিনজন পালাক্রমে স্বাস্থ্য সেবা আউট ডোরের মাধ্যমে পরিচালনা করে আসছি। তবে এখানে স্থায়ী কোন জনবল নেই। তবে কিছু সরঞ্জাম এসেছি কিন্তু জরুরী বিভাগ চালু করার মতো কোন কিছু এখনো আসেনি। তিনি আরো বলেন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার হিসেবে আমার তিনজন আছি। আমরা পালাক্রমে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আউট ডোর স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আসছি। তবে এখানে লোকবলের অভাবে স্বাস্থ্য সেবা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে কিছু লোক চম্পকনগর বাজার কমিটি আর উপজেলা পরিষদের সহযোগিতায় কিছু সম্মানির মাধ্যমে কয়েকজন ব্যক্তি ডাক্তারদেরকে সহায়তার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মেহের নিগার বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবলের অভাবে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা চালু করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতালের আউট ডোর চালু রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জস ভাল বলতে পারবেন।
জেলা সিভিল সার্জস ডাঃ মোঃ শাহ আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সাব-সেন্টার থেকে ৩ জন ডাক্তার এনে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের আউট ডোর সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করার জন্য লোকবল নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্ত থেকে ফাইলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন অনু শাখায় ফাইলটি রয়েছে। এই ফাইলটি যখন অনুমোদিত হবে তখনই আমরা লোকবল নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করতে পারব। এ নিয়ে আমি আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-০৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী এমপি মহোদয়কে জানিয়েছি। আশা করছি শীঘ্রই আমরা এ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু করতে পারব।
Copyright © 2023 সময়কাল নিউজ | Design & Developed By: ZamZam Graphics